এই সময়:
থরে থরে সাজানো টাকা। গুনতে গুনতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তদন্তকারীরা। বিপুল নোটের ছবি-ভিডিয়ো দেখে চমকে উঠেছিলেন মানুষ। সেই টাকার পাহাড় গড়ে ওঠার পিছনেও কি ভূমিকা ছিল কুন্তল ঘোষের? আদালতকে শুক্রবার ইডি (ED) যা জানিয়েছে, তার ভিত্তিতে সামনে এসেছে এমন সম্ভাবনাই। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির (SSC Scam) মামলায় গত বছর জুলাই মাসে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা মু্খোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee)। তদন্তে নেমে হরিদেবপুর ও বেলঘরিয়ায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ওই টাকার পাহাড় উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা। যার অঙ্ক প্রায় ৫০ কোটি। সেই বিপুল পরিমাণ টাকার একাংশই কুন্তলের থেকে এসে থাকতে পারে বলে শুক্রবার আদালতকে জানিয়েছে ইডি। এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ ইডি আদালতে পেশ করা হয় প্রাথমিক টেট দুর্নীতিতে (TET Scam) ধৃত, হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলকে। ইডির তরফে ১৯ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার হিসেব দিয়ে জানানো হয়, সাত মাস আগে ধৃত পার্থর সঙ্গে দুর্নীতিতে সরাসরি যোগ ছিল কুন্তলের। এমনকী, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল যে টাকা তুলেছেন, তার ভাগ পেয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। যে তালিকায় পার্থও আছেন।
97430306
১৪ দিনের জন্য তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এ দিন আদালতে কুন্তলকে পেশ করে জেলে পাঠানোর আর্জি জানায় ইডি। সেই সঙ্গে তাঁকে জেলে গিয়ে জেরারও অনুমতি চাওয়া হয়। বিচারক তা মঞ্জুর করেন। ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে নবম-দশম, উচ্চ প্রাথমিক এমনকী শিক্ষাকর্মী নিয়োগের নাম করে ১৩০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লক্ষ করে টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল। সেই টাকার ভাগ পৌঁছে গিয়েছে
পার্থ চট্টোপাধ্যায়
এবং প্রভাবশালীদের কাছে। সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে আরও তথ্য পেতে কুন্তলকে এখনও জেরার প্রয়োজন রয়েছে।’ বিচারকের হাতে নথিপত্র দিয়ে ফিরোজ বলেন, ‘যে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ হচ্ছিল না, তাঁদের আদালতে মামলা করিয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কুন্তল। সে জন্য ১,২০০ প্রার্থীর থেকে ২০ হাজার করে নিয়েছিলেন তিনি।’
97573974
অভিযুক্ত কুন্তলের তরফে আইনজীবী সেলিম রহমান এবং রাণা সেনগুপ্ত এই তত্ত্ব খারিজ করে দাবি করেন, ‘আমার মক্কেলের বাড়ি থেকে কী কী উদ্ধার হয়েছে, সেই সিজ়ার লিস্ট আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়নি। এক টাকাও পাওয়া যায়নি সেখান থেকে। কিছু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পরে সিজ়ার লিস্টে নতুন তথ্যও ঢুকিয়ে দেওয়া হতে পারে।’ ফিরোজ এর বিরোধিতায় বলেন, ‘যে সব নথি এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার হয়েছে, তা থেকে অনেক কিছু জানা গিয়েছে। দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার হিসেব মিলেছে। সেই টাকা জমা করেন কুন্তল নিজেই। এর পর তা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। কারা সেই টাকা পেয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ কুন্তলের আইনজীবীদের যুক্তি, ‘গত বছর জুলাই মাস থেকে তদন্ত চলছে। প্রায় ১০০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁরা সাক্ষী দিয়েছেন, কিন্তু কুন্তলের নাম বলেননি। তাপস মণ্ডল, যিনি একজন অভিযুক্ত। যাঁর নাম চার্জশিটেও রয়েছে, তাঁর কথায় গ্রেপ্তার করা হলো আমাদের মক্কেলকে। অথচ তাপসকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি মিডিয়ায় বাইট দিয়ে চলেছেন।’
97471999
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি
মানিক ভট্টাচার্যের
ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস অবশ্য শুধু কুন্তলের নামই নেননি। সংবামাধ্যমে দাবি করেছিলেন, প্রায় ১৯ কোটি টাকা তিনি কুন্তলকে দিয়েছিলেন চাকরি করিয়ে দেওয়ার জন্য। ইডি এ দিন আদালতকে জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। কুন্তল জানিয়েছেন, তিনি মাত্র ১০ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন। এই মামলায় আরও অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে। এমনকী, ২০২২-এর ১১ ডিসেম্বরের
২৫০টি ওএমআর শিটের ফোটোকপিও মিলেছে কুন্তলের বাড়িতে। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাই কুন্তলকে আরও জেরার প্রয়োজন।