ফ্যাক্ট চেক: হিন্দুদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য মুসলমানদের প্রস্তুত হতে বলেননি ত্বহা সিদ্দিকি

“মুসলমান জাগো। ছেলেমেয়েদের লড়াই করা শেখান। যুদ্ধ করা শেখান। তৈরি হন। প্রস্তুত হন। মুসলমান ছেলে মেয়েদের প্রস্তুত করুন। বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের তৈরি করুন। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে হিন্দুদের সঙ্গে। আমাদের লড়াই করতে হবে হিন্দুদের সঙ্গে।” মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই বক্তব্য পেশ করছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে সেই ভিডিয়ো। বিপুল সংখ্যক জনতার সামনে দাঁড়িয়ে তহ্বা সিদ্দিকির এই বক্তব্যকে মোটেই ভাল ভাবে নেননি নেটিজেনরা। 

ভিডিয়োটি শেয়ার করে একজন লিখেছেন, “কাদের সঙ্গে যেন লড়াই করতে হবে বলছে? হিন্দুরা শুনতে পাচ্ছেন আপনারা??। প্রস্তুত হোন যে কোন মুহূর্তে হিন্দুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পরবে। আপনার ও আপনার পরিবারের ওপর।।”  আরও একজন লিখেছেন, “হিন্দু তুমি ঘুমিয়ে থাকো,আর নিজের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করো। আমার সেকুলার হিন্দু ভাইয়েরা দেখো,আবারো বল হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, মুসলমানরা কাফের হিন্দুদের হত্যা করার প্রস্তুতি নিয়েছে, পীরজাদা তত্ব সিদ্দিকী প্রকাশে বলছে হিন্দুদের সঙ্গে লড়াই করতে, হিন্দু তোমাকে কেউ বাঁচতে পারবে, নিজের লড়াই নিজেকেই করতে হবে। সনাতন ধর্মের কে রক্ষা করতে নিজের পরিবার কে বাঁচাতে,এই জেহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন”

যদিও ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ত্বহা সিদ্দিকির ভাইরাল বক্তব্যটি সম্পাদিত। হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোনও বার্তা দেননি ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা।

আফয়া অনুসন্ধান

ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে কয়েকটি চ্যানেলে আমরা ভাইরাল ভিডিয়োটি দেখতে পাই। ‘RUHUL STAR CHANNEL’   নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে, ২৮ জানুয়ারি ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়েছিল। ওই ভিডিয়োটির ৯ মিনিট ৪ সেকেন্ডে ত্বহা সিদ্দিকিকে বলতে শোনা যায়, “এই কদিন আগে আমি গিয়েছিলাম রাজারহাট। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। আমাকে বললেন ‘হুজুর আপনি একটু আসুন’। আমি বললাম ‘যাব’। গিয়ে দেখি কয়েক হাজার মেয়ে, কয়েক হাজার ছেলে হিন্দু ও মুসলমান ভর্তি হয়েছে। আমি সেখানে যা বক্তৃতা দিয়েছিলাম, তা শুনলে হিন্দু ভাইয়েরা এখনই ক্ষেপে যাবেন ক্ষণিকের জন্য, তারপর আনন্দ পাবেন। রাজারহাটে বক্তব্য দিতে দিতে আমি বলেছিলাম, আজও বলছি, ‘মুসলমান জাগো। ছেলেমেয়েদের লড়াই করা শেখান। যুদ্ধ করা শেখান। তৈরি হন। প্রস্তুত হন। মুসলমান ছেলে মেয়েদের প্রস্তুত করুন। বাবা-মারা ছেলেমেয়েদের তৈরি করুন। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে হিন্দুদের সঙ্গে। আমাদের লড়াই করতে হবে হিন্দুদের সঙ্গে।’ বলার পর স্টেজে দেখি সব মন্ত্রীদের মুখগুলো ছোট। গোটা মজলিসে হিন্দু-মুসলমান সবাই থরথর করছে, ভাবছে আমি সাম্প্রদায়িক, আগুন লাগাতে এসেছি। আবার বলছি, ‘মুসলমান ছেলে-মেয়েদের তৈরি করুন, লড়াই করতে শেখান। হিন্দুদের বিরুদ্ধে, খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখান। কিন্তু সেই লড়াই যেন তরোয়ালের লড়াই না হয়। বন্ধুকের লড়াই না হয়। লাঠির লড়াই না হয়। সেই লড়াইটা হবে শিক্ষার লড়াই।’ যখনই বলেছি সবাই হাসছে। বাংলার হিন্দু-মুসলমান ছেলেমেয়েরা একে অপরের সঙ্গে শিক্ষার লড়াই করবে। তারপর তাঁরা এক হয়ে অন্য রাজ্যের সঙ্গে শিক্ষার লড়াই করব। শিক্ষার লড়াই হবে।”   

Waz Mahfil 21 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিয়োটি ২৭ জানুয়ারি আপলোড করা হয়েছিল। 

একই ভিডিয়ো ৩ ফেব্রুয়ারি টুইটারে শেয়ার করেছেন সাংবাদিক তমাল সাহাও।

সুতরাং সমস্ত তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে একথা বলাই যায় যে, হিন্দুদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য মুসলমানদের প্রস্তুত হতে বলেননি পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। তিনি কোনও সাম্প্রদায়িক বক্তব্যও পেশ করেননি। তাঁর গোটা বক্তব্যের একটা অংশকে ভুল ব্যাখ্যা-সহ ভাইরাল করা হচ্ছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *