মৃত পারভেজ মুশারফকে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখার নিদান ছিল পাক আদালতের। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে প্রাক্তন পাকিস্তান প্রেসিডেন্টকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছিল। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগেই যদি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা সেনপ্রধানের মৃত্যু হত, তবে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হত তাঁর মরদেহ। কিন্তু, কেমন এমন ভয়াবহ নিদান দেওয়া হয়েছিল?
97618363
‘রাষ্ট্রদ্রোহী মুশারফকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা!
২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে দেশে জরুরি অবস্থা জারির জন্য মুশারফকে দায়ী করে পাক সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পারভেজ মুশারফের বিরুদ্ধে বিরাট রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে এই মামলা পড়ে ছিল। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এই মামলায় ৭৬ বছরের মুশারফকে বয়ান দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল লাহোরের বিশেষ আদালত। এরপর তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে বিশেষ আদালত। দেশের ইতিহাসে কোনও সেনাশাসককে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনা সেই প্রথম।
72899853
কী প্রতিক্রিয়া ছিল মুশারফের?
সাজা ঘোষণার সময় দুবাইয়ে চিকিৎসারত ছিলেন পারভেজ মুশারফ। শাস্তির কথা জানার পর দুবাইয়ে হাসপাতালের বিছানা থেকে এক ভিডিয়ো বার্তা দেন মুশারফ। তিনি বলেন, “দশ বছর ধরে দেশের সেবা করেছি। দেশের হয়ে লড়াই করেছি। এই মামলায় আমার কথাটুকুও শোনা হল না। স্রেফ ষড়যন্ত্রের শিকার করা হল।” যদিও এই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা রাখা হয়েছিল প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্টের জন্য।
72867380
মুশারফের দেহ প্রকাশ্যে ঝোলানোর নিদান!
পাকিস্তানের বিশেষ আদালতের রায়ে একটি অংশ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। রায়ের ৬৬ নম্বর প্যারাগ্রাফে বলা হয়েছিল, “অসুস্থ মুশারফ যদি মৃত্যুদণ্ডের আগেই মারা যান, তবে তাঁর মৃতদেহ ইসলামাবাদের ডি চকে তিন দিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা উচিত।” এই বিষয়টি নিয়ে পাক সেনার তরফে চরম ক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। মুশারফের মৃত্যুদণ্ড ধর্ম এবং মানবিকতার বিরুদ্ধ বলে প্রচার শুরু করে পাক সেনা। তাদের বক্তব্য ছিল, এ ভাবে টেনেহিঁচড়ে প্রকাশ্যে দেহ ঝুলিয়ে রাখার নিদান নৃশংস। ফলে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল ইমরান খানের সরকার।
73232388
বাতিল হয় মৃত্যুদণ্ডের সাজা
২০২০ সালে পারভেজ মুশারফকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে লাহোর হাইকোর্ট। এই সাজাকে অসাংবিধানিক তকমা দেয় আদালত। লাহোর হাইকোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ (বিচারপতি সৈয়দ মঝহার আলি আকবর নকভি, বিচারপতি মহম্মদ আমির ভাট্টি ও বিচারপতি চৌধুরি মাসুদ জাহাঙ্গীর) সর্বসম্মতি ক্রমে বিশেষ আদালত গঠনকেই ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে। আদালতের বক্তব্য ছিল, মুশারফের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি আইন মেনে করা হয়নি। স্বস্তি পান মুশারফ।