West Bengal Latest News গঙ্গাজলই ওদের লক্ষ্মী। তিন প্রজন্ম ধরে গঙ্গার জলই যোগাচ্ছে ওদের পেটের ভাত। উপছে উঠছে পারিবারিক সম্পদ। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগের তত্ত্বাবধানে, গঙ্গাজল বিক্রির ব্যবস্থা চালু হলেও, রানাঘাটের অশোক হালদারের ব্যবসায় ভাটা পড়েনি এতটুকু। রানাঘাট মূল শহরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা, তাও আবার পৌঁছাতে হয় চূর্ণি নদী পেরিয়ে। সেই কারণে এত হ্যাপার থেকে বোতলবন্দি জল কেনা সহজ মনে হয় এখনকার মানুষের কাছে।
গঙ্গাজল নিয়ে ব্যবসা
গঙ্গাজলকে বোতলবন্দি করে বিক্রির বুদ্ধি আজকের নয়। গঙ্গাজলে লক্ষ্মীলাভের আইডিয়া প্রথম মাথায় এসেছিল হালদার পরিবারের তিন পুরুষ আগের মানুষ, অশোক হালদারের ঠাকুর দাদা নন্দলাল হালদারের মাথায়, সেই শুরু। ঠাকুরদা নন্দলাল হালদার , বাবা মোহন চন্দ্র হালদার এবং তিনি অশোক হালদার তিন প্রজন্ম ধরে গঙ্গাজল বেচেই তাদের পরিবার সদস্যদের জীবন জীবিকা। ৬০ বছর বয়সী অশোক বাবু, আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাবার সঙ্গে সহযোগিতা করতেন এই ব্যবসায়। তখন অবশ্য দাঁড় টানা নৌকায় চূর্ণী নদী বেয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার জলপথ পেরিয়ে ভাগিরথীর বলাগড় ঘাট থেকে জল আনতেন। এখনও তাই আনেন তবে, দাঁড় টানা নৌকা এখন নিজস্ব ইঞ্জিন চালিত ভটভটিতে পরিণত হয়েছে।
97492723
বিক্রেতা অশোক হালদার জানাচ্ছেন, ”শ্রাদ্ধ উপনয়ন বিবাহ যেকোনও পুজো সর্বত্রই লাগে গঙ্গাজল। বহু পূর্বে তিন পুরুষ আগে ঠাকুর দাদা চালাতেন নৌকা, তিনিই সমগ্র রানাঘাটবাসীকে এনে দিতেন গঙ্গাজল। কাকা জ্যাঠা , এবং আমার অন্যান্য ভাইয়েরা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হলেও সেই পরম্পরা ধরে রাখি বাবা এবং আমি।” অশোক বাবু জানান, সকাল ছটায় গঙ্গা থেকে জল এনে, ফুটপাতের ওপরেই বসানো বড় ট্যাঙ্কে।ইলেকট্রিক্যাল মোটর চালিয়ে নদী থেকে জল তোলা হয়। সারাদিন সহ রাত নটা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তবে একদিন দোকানদারি করলে তার পরে দুদিন আর বসা হয় না। একদিকে যেমন বড় বড় জলভর্তি জার সরানো ও নাড়ানোর খাটুনি। অন্যদিকে, ক্রেতাদের জল ফুরানোর সামঞ্জস্য রেখে সপ্তাহে দু তিন দিন চলে এই ব্যবসা।
গঙ্গাজলের দাম
৩ টাকা লিটার হিসাবে বিক্রি করলেও, বড় বড় ড্রাম ভরে যারা নেন, তাদের জন্য পাইকারি রেট। মোটামুটি ৬০০ লিটার জল বিক্রি হয় প্রতিদিন। এদিন যেমন মাঘী পূর্ণিমা, সেই উপলক্ষে একটু বেশি জল বিক্রি হয়। এরকমই বিভিন্ন পুজো অর্চনার দিনে বিক্রির পরিমাণ হাজার লিটারে পৌঁছে যায়। ২ থেকে ৩ টাকা লিটার প্রতি গঙ্গাজল কিনতে পিছুপা হন না এ প্রজন্মের ব্যস্ত ছেলেমেয়েরা।
97527741
২০০৮ সালের বাবা মারা যাওয়ার পর, অন্য কোনও ছেলেরা এই পেশায় আসতে না চাইলেও, পরম্পরা রাখতে এবং ক্রেতাদের চাহিদায় এই বয়সেও নিয়মিত সকাল ছয়টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন অশোক বাবু। তবে প্রতিযোগী বলতে কেউ নেই এই ব্যবসায়। সে বিষয়ে তিনি বলেন হাড় ভাঙ্গা খাটনি করার সংখ্যা কমে যাচ্ছে দিনে দিনে। সন্তানদের পড়াশোনা শেখানোর পর সুপাত্রস্থ করেছেন, এই গঙ্গাজল বিক্রি করেই। ছেলে ছোটখাটো ব্যবসা করলেও, তার সঙ্গেই সময় দেয় বলে জানালেন অশোক হালদার। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই রানাঘাট ছোট বাজার ফুটপাতের ধারে এই গঙ্গাজল বিক্রির কথা জানেন সকলেই। পরিষ্কার শুদ্ধ গঙ্গাজল পেতে বলাগড় ঘাটে পৌঁছানোর ঝঞ্ঝাট এবং সময় বাঁচাতে ৩০ টাকা দিয়ে ১০ লিটার জল কিনে নিয়ে যাওয়া অনেক ভালো।