অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ফিঞ্চ জানিয়েছিলেন তিনি আর আন্তর্জাতিক এক দিনের ক্রিকেট খেলবেন না।
এবারে তিনি সব ফরম্যাটেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় ঘোষণা দিলেন।
ফিঞ্চ অবসরের বিবৃতিতে বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলাটাই ছিল বিশাল সম্মানের।”
অবসরের কারণ হিসেবে ৩৬ বছর বয়সী ফিঞ্চ বলেন, “মনে হলো ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলবো না। এটাই আমার সবচেয়ে ভালো সময় মনে হয়েছে যাতে দলও আমাকে ছাড়া পরিকল্পনা করে সামনে আগাতে পারে।”
রিকি পন্টিং, স্টিভ ওয়াহ, মাইকেল ক্লার্ক- অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কদের নামিদামি তালিকায় অনেকেই ফিঞ্চকে ওপরের দিকে রাখবেন না, কিন্তু ফিঞ্চ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য ছিলেন বিশেষ এক ব্যক্তিত্ব।
https://twitter.com/FoxCricket/status/1622744002981396481
ফিঞ্চ হাল ধরেছিলেন ‘প্রশ্নবিদ্ধ এক দলের’
দুই হাজার আঠারো সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এমন এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিল যা অনেকেই প্রত্যাশা করেনি।
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে বল টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনায় জড়ায় অস্ট্রেলিয়া
দক্ষিণ আফ্রিকার নিউল্যান্ডসে এই ঘটনার পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে গভীর দাগ কেটেছিল এই ঘটনা।
ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন বটে কিন্তু এই দুজন বিশ্ব মানের ক্রিকেটারকে আর অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করেনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান দলকে ঘিরে ছিল নানা প্রশ্ন।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া মনে করে, অ্যারন ফিঞ্চ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ একটা জায়গাজুড়ে থাকবেন।
সেই সময় অ্যারন ফিঞ্চ দলের নেতা হয়েছেন, পারফর্মও করেছেন।
দুই হাজার উনিশ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে ১০২ স্ট্রাইক রেটে ৫০৭ রান তুলেছিলেন।
ফিঞ্চের সাথে ডেভিড ওয়ার্নারের উদ্বোধনী জুটি গত দশকের সেরা জুটিগুলোর একটি ছিল।
বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের একজন ছিলেন ফিঞ্চ
অ্যারন ফিঞ্চ এমন এক রেকর্ড নিজের করে নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করছেন যা অনেক ব্যাটসম্যানের পক্ষেই স্বপ্ন।
একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৭২ রান তুলেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ, যা অনেক দলের জন্যই কঠিন হয়ে যায় অনেক ম্যাচে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে হারারেতে ৭৬ বলে ১৭২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ।
এটাই এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের ব্যক্তিগত ইনিংস।
অ্যারন ফিঞ্চ অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩১২০ রান তুলেছেন, ১৪২ স্ট্রাইক রেটে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩০০০ বা তার চেয়ে বেশি রান করেছেন এমন কারও স্ট্রাইক রেট ১৪০’ও স্পর্শ করেনি।
অ্যারন ফিঞ্চের নামের পাশে যত রেকর্ড
- অ্যারন ফিঞ্চ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক।
- অ্যারন ফিঞ্চ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন।
- অ্যারন ফিঞ্চ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দলকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
- আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিঞ্চ ১৫০ বা তার বেশি রান তুলেছেন।
এটা অবশ্য ১৭২ রানের ইনিংসেরও পাঁচ বছর আগে, ২০১৩ সালের অগাস্টে সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৩ বলে ১৫৬ রান তুলেছিলেন ফিঞ্চ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনটি ব্যক্তিগত ১৫০ এর বেশি রানের ইনিংসের মধ্যে দুটিই ফিঞ্চের ব্যাট থেকে এসেছে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বেশ কয়েকটি রেকর্ডের মালিক ফিঞ্চের হাতে বাহারি শট ছিল না, ব্যাটিং টেকনিক এবং হাত ও চোখের সমন্বয় ছিল দুর্দান্ত।
অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে অস্ট্রেলিয়া প্রায় ১৪ বছর চেষ্টা করে ছয়টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছিল অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে।
ব্যাট হাতে ফিঞ্চ বিশেষ অবদান না রাখলেও এই দলটাকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জিততে ভূমিকা রেখেছেন ফিঞ্চ।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই ফিঞ্চ বলে এসেছেন এবারে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিয়েই টুর্নামেন্টে এসেছে অস্ট্রেলিয়া এবং সেটাই করে যাচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে পাকিস্তান ও ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে ৪০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছেন ফিঞ্চ।
মঙ্গলবার তিনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতির কথা ঘোষণা দেন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
গেল বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার দলগত ব্যর্থতা এবং জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজের ব্যাটে রান না আসাই একটা বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ফিঞ্চের এই অবসরের ঘোষণার পেছনে।
এর আগে গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে ১০ রান করার পর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ফিঞ্চ।
ওয়ানডে ক্রিকেটেও ফিঞ্চের পাঁচ হাজারের বেশি রান আছে এবং ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ফিঞ্চ।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ও ১৪৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা ফিঞ্চ মাত্র পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পেরেছেন।
দশ ইনিংসে দুটি ফিফটি করলেও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে এর বেশি সুযোগ পাননি ফিঞ্চ।
তাকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট মনে রাখবে সাদা বলের ক্রিকেটে দুটি বিশ্বকাপ এবং আট হাজারেরও বেশি রানের জন্য।
ফিঞ্চও বিদায় বেলায় বলে গেলেন, তিনি কৃতজ্ঞ থাকবেন সবার প্রতি যারা তাকে সাহস জুগিয়েছেন।