হাওড়ায় কল্পতরু মমতা! কোনা এক্সপ্রেসে নয়া সেতু, ফুরফুরা শরিফে ১০০ বেডের হাসপাতাল

হাওড়া: হাওড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী যেন কল্পতরু। এদিনের সভামঞ্চ থেকেই ১৫টি জেলার জন্য ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার ৯১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি, এদিনের সভামঞ্চ থেকেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন তিনি।

মমতা জানান, হাওড়া জেলার সঙ্গে অন্য জেলার যোগাযোগের সুবিধার্থে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে তৈরি হচ্ছে নতুন ব্রিজ। পাশাপাশি, ২ লেনের আন্ডারপাসও থাকছে। ২ নম্বর ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে। সেই কারণে যানজট এড়াতে ২ লেনের রাস্তা বাড়িয়ে চার লেনের করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া, কোচবিহারে, অন্ডালে এবং মালদহ, এই তিন জেলাতেই তৈরি হয়ে গিয়েছে বিমানবন্দর। এতেও মানুষের সুবিধা হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: রাতভর তল্লাশি, বান্ডিল-বান্ডিল ভর্তি টাকা! বালিগঞ্জে আর যা পেল ইডি, বিরাট চমক

ফুরফুরা শরিফে ৩০ বেডের হাসপাতাল আগে থেকেই ছিল। সেখানে ১০০ বেডের হাসপাতাল তৈরির শিলন্যাস হল এদিন। তাছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সাগরদত্ত হাসপাতালে চালু হচ্ছে ক্যানসার ইউনিট। হুগলির ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল এবং ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’টি ক্রিটিক্যাল ইউনিটের শিলন্যাসও হয় এদিন।

এদিনের মঞ্চ থেকে,কৃষক তথা পশুপালক ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ২১৮ টি অ্যানিমেল অ্যাম্বুল্যান্স চালু করল রাজ্য সরকার। গবাদি পশু, বা পালিত পশু কোনও কারণে অসুস্থ হলে তাকে যাতে দ্রুত পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় সেই কারণেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত, ১২৬ টি ব্লকে চালু হবে এই পরিষেবা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ” ২ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা খরচ করে ২০৮টি পানীয় জল প্রকল্প তৈরি করছে পিএইচই দফতর। সেগুলিরও শিলন্যাস হল আজ।” মমতা জানান, ৫০ লক্ষ মানুষ এর ফলে বাড়িতে জল পাবেন। গ্রামীণ এলাকাতেও বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে যাবে। তাঁর আশ্বাস, “২০২৪ সালের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব, সব বাড়িতে যাতে জল পৌঁছে যায়। ৫৬টি ভূগর্ভস্থ পানীয় জল সরবরাহ কেন্দ্র হল হাওড়াতে। ৫ লক্ষ ৫৯ হাজার মানুষ উপকৃত হলেন।”

হওড়ার ডুমুরজোলা স্টেডিয়ামকে ‘সবুজ সাথী’ নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান মমতা। পাশাপাশি, বাম আমলকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, “এক সময় হাওড়াকে প্রাচ্যের ম্যাঞ্চেস্টার বলা হত। বাম আমলে হাওড়ার সব শিল্প নষ্ট হয়েছে। তবে হাওড়ায় শিল্পের জোয়ার এসেছে।” মমতা জানান, হাওড়ায় শিল্পে ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। ৬৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ভবিষ্যতেও দেড় লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশ্বাস তাঁর।

আরও পড়ুন: টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ, এবার রাজ্যে আসছে ক্যাগ অডিটের বিশেষ দল

হাওড়া জেলায় ৫৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় এদিন। জানা গিয়েছে, ৬৬ একর জমির উপরে ফুডপাছ গড়ে তোলা হচ্ছে। ১১৯টি প্লট বন্টন করা হবে। তাতে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা মুখ্যমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার তিন জনকে ‘অ্যালোটমেন্ট লেটার’ও দিয়ে দেওয়া হয় এদিন। মমতা জানান, কেবল হাওড়া জেলাতেই ৬ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মানুষ পরিষেবা পেয়েছেন বৃহস্পতিবার।

এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী আসেন দেউচা পাঁচামির কথায়। সেখানে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রত্যেক জমিদাতাকেই দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্যাকেজ। যাঁরা জমি দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। পুরুলিয়ায় ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে বলে দাবি মমতার।

এরপরেই একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনও তাঁর মুখে শোনা যায় বঞ্চনার অভিযোগ। তিনি বলেন, “গরিব লোকের টাকা মারবে না কেন্দ্র। টাকা ফেরত দিন। ১০ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ দিয়েছে রাজ্যের পয়সা থেকে। আবাস যোজনা, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা দেয় না। ১১ লক্ষ লোকের বাড়ির টাকা পড়ে।” মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রেশনে ফুড সাবসিডি-ও কেটে দিয়েছে কেন্দ্র। জিএসটি থেকে রাজ্যের অংশ সরকারকে দেওয়া হয় না বলেও তোপ দাগেন মমতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *