রহস্যে ভরা এক্তেশ্বর, বাংলার অন্যতম শৈবতীর্থ, মনস্কামনা পূরণের মন্দির

বাঁকুড়া শহরের কাছেই দ্বারকেশ্বর নদীর ধারে রয়েছে জেলার প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় শিব মন্দির এক্তেশ্বর মন্দির। প্রতিবছর চৈত্র মাসে ভক্তের ঢল নামে এই মন্দিরে। এছাড়া শ্রাবণ মাসেও বহু ভক্ত এখানে ভিড় করেন। তাছাড়া সারা বছরই অসংখ্য ভক্ত বাংলার অন্যতম এই শৈবতীর্থে যাতায়াত করেন। দুর্গাপুর-বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর-বাঁকুড়াগামী বাস ধরে পাতাখোলা বা ধলডাঙার মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে টোটোয় চেপে সহজেই যাওয়া যায় এই মন্দিরে।

প্রতিবছর চৈত্র মাসে এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে বসে গাজনের মেলা। এক্তেশ্বর মন্দিরে যাওয়ার পথে পড়বে বহু দোকান। সেখানেও পাওয়া যাবে পূজার সামগ্রী। মন্দিরে প্রবেশের আগে আছে বিরাট তোরণদ্বার। যাতে বহু দেবদেবীর মূর্তি খচিত রয়েছে। প্রবেশ তোরণের ওপরে রয়েছে দেবী অন্নপূর্ণা ও মহাদেবের মূর্তি। নীচে রয়েছে দেবী পার্বতীর দশ মহাবিদ্যার দশটি রূপ। এখানে রয়েছে বহু উপমন্দির।

কথিত আছে, এক্তেশ্বর মন্দিরে মনস্কামনা জানালে তা পূরণ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও দূর-দূরান্তের বহু ভক্ত এখানে যাতায়াত করেন। এক্তেশ্বর মন্দিরের সামনেই রয়েছে নাটমন্দিরের মত। যেখানে মন্দিরে কেউ বিয়ে করতে এলে, তা সম্পন্ন হয়। এই মন্দিরের সামনে রয়েছে প্রাচীন মূল মন্দির। যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ঘণ্টা। যা বাজিয়েই প্রবেশ করেন ভক্তরা। মন্দিরটি বেশ কয়েকবার সংস্কার হয়েছে।

আরও পড়ুন- ভরসা জাগ্রত পাগলাবাবা, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত

ল্যাটেরাইট তৈরি সুগঠিত পশ্চিমমুখী মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। ভক্তদের একাংশের ধারণা, এই মন্দিরটি দ্বাপর যুক্ত পাণ্ডবদের সময় নির্মিত হয়েছিল। যা তৈরি করেছিলেন স্বয়ং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মন্দিরের গর্ভগৃহের মধ্যে রয়েছে কুণ্ড। যার মধ্যে রয়েছে শিবলিঙ্গ। অনেকের মধ্যে শিবলিঙ্গ নিয়ে এসে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য।

ইতিহাস বলে, অতীতে সামন্তভূম বা ছাতনার রাজার সঙ্গে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের যুদ্ধ হয়েছিল। দুই রাজার সন্ধিস্থাপনে নাকি অবতীর্ণ হয়েছিলেন স্বয়ং মহাদেব। দুই রাজার বিবাদ মিটিয়ে এই এক্তেশ্বর মন্দিরে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন মহাদেব। দুই রাজার মধ্যে একতা তৈরি করেছিলেন তিনি। তাই এই মন্দিরের নাম হয় এক্তেশ্বর বা একতার ঈশ্বর।

CategoriesUncategorized

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *