কয়লা শিল্পে নতুন বেতন চুক্তি, লাভবান সাড়ে ৫ লাখ শ্রমিক

এই সময়, আসানসোল: দীর্ঘ আলোচনা শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া সমেত কয়লা শিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হলো। ৬৮৮ দিন ধরে আলোচনার পর শনিবার সন্ধ্যায় একাদশ বেতন কাঠামো নিয়ে সমঝোতায় আসেন কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান, কয়লা শিল্পে যুক্ত ১৪ জন আধিকারিক ও ৫টি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। নতুন চুক্তির ফলে কোল ইন্ডিয়ার ২ লাখ ৫৬ হাজার স্থায়ী শ্রমিক সরাসরি লাভবান হবেন। একইসঙ্গে কয়লা শিল্পে যুক্ত প্রায় ৩ লাখ ঠিকা শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে নতুন চুক্তিতে। বেতন বৃদ্ধিতে ৮১৩২ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে বলে জানা গিয়েছে।

চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী শ্রমিক সংগঠন সিটুর পক্ষে সুজিত ভট্টাচার্য জানান, এই বেতন চুক্তি পয়লা জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত অর্থাৎ ৫ বছরের জন্য কার্যকর হবে। চুক্তিতে ন্যূনতম ১৯ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে যাঁরা এত দিন ২৭ হাজার ৮০০ টাকা বেতন পেতেন, নতুন চুক্তির পর তাঁদের বেতন বেড়ে হবে ৩৯ হাজার টাকা। তার সঙ্গে আলাদা করে বাড়বে অন্যান্য ভাতা। সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়বে বেতন।’

বেতন বেড়েছে ঠিকাকর্মীদেরও। সুজিত বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে কয়লা শিল্পে যুক্ত ঠিকাকর্মীদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ছিল ৪৫৬ টাকা। এবার তা ন্যূনতম ১০২৭ টাকা করা হয়েছে। আমরা দাবি করেছিলাম, কোল ইন্ডিয়ার ৬৬ শতাংশ উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এই ঠিকা শ্রমিকরা। তাই স্থায়ী শ্রমিকদের মতো এঁদের জন্যেও পৃথক বেতন কমিটি গড়তে হবে।’ এর সঙ্গে অবিলম্বে ওই ঠিকাকর্মীদের প্রত্যেককে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থার মধ্যে এনে তা সেন্ট্রাল সার্ভারে যুক্ত করার দাবিও জানানো হয়েছে। ওই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘এতে তাঁদের হাজিরা সংক্রান্ত দুর্নীতি বন্ধ হবে। প্রত্যেক ঠিকাকর্মীর ব্যাঙ্ক একাউন্টে তাঁদের মজুরি পাঠাতে হবে। প্রত্যেক ঠিকাকর্মীকে কোল মাইনস প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আনার দাবিও আমরা জানিয়েছি।’

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোল ইন্ডিয়া এবার ৭০৪ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। একই সঙ্গে মুনাফা করেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা একটা রেকর্ড। গত বছর মুনাফার পরিনমাণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। এবার তা ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। নতুন চুক্তির ফলে ইসিএলের ৫০ হাজারেরও বেশি স্থায়ী শ্রমিক এবং ২৫ হাজারের বেশি ঠিকা শ্রমিক লাভবান হবেন।

হিন্দ মজদুর সভার সর্বভারতীয় সম্পাদক নাথুলাল পান্ডে বলেন, ‘৬৮৮ দিন ধরে ১১টি বৈঠক করে এই সমঝোতা হয়েছে। ভালো বিষয় যে, এর জন্য কোনও ধর্মঘট বা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে হয়নি। এটা খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’ এআইটিইউসি-র নেতা লক্ষ্মণ লাল মাহাতো বলেন, ‘পুরো বিষয়টি কর্মীদের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভূমিকা করেছে।’ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের কে লক্ষ্মণ রেড্ডির বক্তব্য, ‘শ্রমিক স্বার্থে এই সমঝোতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তৈরি করল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *